প্রধান শিক্ষক’কের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় রাবি শিক্ষার্থী, নাহিদের পরিবারকে নির্মম নির্যাতন থানার নীরবতায় নিরাপত্তাহীনতায়

রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি:

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয় বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য ও অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তিনি ও তার পরিবার বারবার হামলার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। নাহিদ জানান, গোবিন্দপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাদেশ আলীর বিরুদ্ধে স্থানীয়দের সঙ্গে একত্রিত হয়ে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তোলেন এবং প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবি জানান।

এরপর থেকেই তাকে এবং তার পরিবারের ওপর একাধিকবার পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়। সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ তারাবির নামাজ শেষে মসজিদ প্রাঙ্গণে তার ওপর হামলা হয়। এতে তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য আহত হন। এমনকি অসুস্থ মাকে হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও হামলার মুখে পড়তে হয় বলে দাবি করেন তিনি। ঘটনার পর ২৭ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত একাধিকবার মান্দা থানায় গিয়ে মামলা করার চেষ্টা করলেও, মামলা গ্রহণ করেননি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর আলী। বরং থানা থেকে তাকে বিভিন্ন সময় ডেকে হয়রানিও করা হয় বলে অভিযোগ নাহিদের। নাহিদ অভিযোগ করেন, প্রতিপক্ষের দায়ের করা মামলা পুলিশ সহজেই গ্রহণ করলেও, তাদের পক্ষ থেকে বারবার চেষ্টা করেও কোনো মামলা নেয়নি পুলিশ।

এতে পরিবারসহ তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।তিনি বলেন, “যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি, সেই কারণে আজ পরিবার নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে। ঈদের সময়ও গ্রামে যেতে পারিনি, কারণ প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছি।” নাহিদ দাবি করেন, এই সকল ঘটনার মূল উসকানিদাতা হলেন গোবিন্দপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশ্যপ্রহরী ও স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম, যিনি ওই ওয়ার্ডের যুবলীগ সভাপতি হিসেবেও পরিচিত। তিনি বহিষ্কৃত প্রধান শিক্ষক বাদেশ আলীর আত্মীয়।নাহিদের ভাষ্য অনুযায়ী, সাইফুল আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত ছিলেন।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি ভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে তার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। নাহিদ বলেন, “সাইফুল ইসলাম সরাসরি হুমকি দিয়েছে আমি যদি গ্রামে ঢুকি, তাহলে আমাকে হত্যা করবে। এই হুমকির কারণে আমি ঈদেও গ্রামে যেতে পারিনি। উল্লেখ্য যে, নাহিদ জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। অন্যদিকে, একই গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম নাহিদ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে শহিদুল বলেন, নাহিদের পিতা আব্দুল আলিম আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালান এবং আমার চাচাতো ভাই দেলশাদের মাথায় আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দেন। তার মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই দিতে হয়েছে।

এ ব্যাপারে মসজিদের মুয়াজ্জিন আনিসুর রহমান সরদার বলেন, “নাহিদের দাদা মোঃ আফজাল হোসেন এই মসজিদে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে নামাজ পড়িয়ে আসছেন। গত রমজান মাসে তিনি বলেন, বয়স হয়েছে, এবার তিনি আর তারাবির নামাজ পড়াতে পারবেন না। তখন গ্রামে থাকা তিনজন হাফেজ ১০ দিন করে ৩০ রাকাত নামাজ পড়াবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম ১০ দিন শহিদুল’র ছেলে নামাজ পড়ানোর কথা থাকলেও তিনি জোরপূর্বক ২৪ দিন পার করে দেন। তখন মুসল্লীদের মাঝে আলোচনা শুরু হয়। ২৪ রমজান তারাবির নামাজ শেষে মো. আফজাল হোসেন শহিদুল’কে বলেন তোমার ছেলে ১০ দিন তারাবির নামাজ পড়ানোর কথা কিন্তু সে দিন ২৪ নামাজ পড়িয়েছে, বাকিদেরও সুযোগ দেওয়া উচিত।

এরপর এ নিয়ে কথা কাটাকাটি এবং পরে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় শহিদুলের চাচাতো ভাই দেলশাদ আহত হন।” এ বিষয়ে মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনসুর আলী বলেন, নাহিদের পরিবারের পক্ষ থেকে অপর পক্ষকে আহত করা হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে, তাই তাদের মামলা নেয়া হয়েছে। কিন্তু নাহিদের পক্ষের কেউ আহত হয়নি, এজন্য তাদের মামলা নেয়া হয়নি। যদি তাদের কেউ আহত হতো, তাহলে অবশ্যই মামলা নেয়া হতো। আমি যদি মনে করতাম, তাহলে নাহিদ ও তার পরিবারের সদস্যদেরও আটক করতাম। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারবো না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *