রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদুল ইসলাম পিটার বলেছেন ‘তুমি একান্তে আমার চেম্বারে এসে দেখা করে যাও। যারা এ ধরনের কাজ করে গিয়েছেন, আমি চাই না তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আর পাঠদান করুক।’
শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার মুক্তমঞ্চ প্রাঙ্গণে ‘আগামীর বাংলাদেশ: তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক।
অধ্যাপক মোর্শেদুল আরো বলেন, ‘আমি প্রথম স্বাধীনতা দেখিনি, কিন্তু দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধে যাদের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি তাদের স্যালুট জানাই। আমি এমন বাংলাদেশ চাই, যেই বাংলাদেশে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কোনো মেয়ে, মেয়ের বান্ধবী, কোনো কলিগ কোনো শিক্ষকের ভয়ে জড়সড় হয়ে মাথা নিচু করে চলবে না। ভবিষ্যতে আমার যে মেয়ে আছে সেও যেন গর্বের সঙ্গে চলতে পারে, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে। আমার যে ছাত্র রাজনৈতিক মতাদর্শ ধারণ করে, এই রাজনৈতিক মতাদর্শ ধারণ করার কারণে কোনো শিক্ষক তাকে পরীক্ষার খাতায় কম নম্বর দিবে না।’
পুলিশ প্রশাসনের স্থানান্তরের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি চাই, রেভুলেশনারি গভর্নমেন্ট তার মেয়াদকালীন আড়াই লাখ পুলিশ অফিসার বা পুলিশ ফোর্স নিয়োগ দিয়ে করাপ্টড ফ্যাসিস্ট সরকারের যে তল্পি বাহক, ক্ষমতার সূতিকাগার, তাদের যে বেইজমেন্ট তাদের রিপ্লেস করুক। সেইসঙ্গে প্রতিটি থানায় ২৪ ঘণ্টার জন্য একটি করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বোর্ড গঠন করা হোক। যাতে কোনো ব্যক্তিকে আটক করা হলে তার পরিবার বা আত্মীয় স্বজন যেন দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে এবং জানতে পারে তার স্বজনকে কেন আটক করা হলো। কোনো থানা পুলিশ অফিসার যেন বলতে না পারে যে, তোমাকে ধরে এনেছি। সাতদিন পর তোমাকে ক্রস ফায়ারে দিব। যদি বাঁচতে চাও, তাহলে তোমার স্ত্রীকে আমার সঙ্গে একরাত বা দুইরাত কাটাতে বলো। এ ধরনের কোনো বিষয় যেন কোনো পুলিশ অফিসার বলতে না পারে।
করাপশন কমিশনের তদারকির জন্য ওয়াচডগ কমিটি চেয়ে তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠানে করাপশন কমিশন রয়েছে। আমি চাই এই করাপশন কমিশনের তদারকির জন্য ওয়াচডগ কমিটি থাকুক, যে কমিটি যারা তাদের কাজের তদারকি করবে। কারণ মধ্যবিত্ত, এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষেরা বুঝতে পারে দুর্নীতির কারণে তাদের জীবন কি পরিমাণ হেল হয়েছে। এমন একটি জাতীয় নির্বাচন হোক যেখানে প্রতিটি নাগরিক তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করবে, যেখানে তাকে কেউ ফোর্স করবে না।
সবশেষে দেশের নেতৃত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ চাই, যেখানে কোনো পলিটিক্যাল পার্টি কোনো বহিঃশত্রু বা বিদেশের আশীর্বাদ নিয়ে ক্ষমতায় আসবে বা বলবে, আমি তো আপনারই স্বার্থ রক্ষা করি বা আমি তো আপনারই কথা শুনি। দিল্লি থেকে ঘুরে এসে বলবে দিল্লির নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে- উনি আমাকে এতো কিছু বলেছেন ঐ কথা বলা যায় না। এ ধরনের লিডারশিপ আমরা চাই না।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাবি শাখার আয়োজনে ‘আগামীর বাংলাদেশ: তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী মেশকাত। প্রধান আলোচক ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মানজুর আল মতিন। আরো আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার পরিষদের অন্যতম সদস্য সারা আহমদ সাবন্তী। সেমিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক রাশেদ রাজনের সভাপতিত্বে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক বক্তব্য দেন। আয়োজনে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।