বরেন্দ্র বার্তা-২৪ ডেস্ক নিউজ:
জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের মাথায় তিনি ভাষণ দিলেন। জাতির উদ্দেশ্যে তার ভাষণে দেশের শিশু, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতিসহ সকলকে সালাম জানিয়ে তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণ অভ্যুত্থানে আহত এবং অঙ্গ হারানো ব্যক্তিদের চিকিৎসার দায়িত্ব বহন করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত জুলাইয়ের ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের শিকার শহীদ পরিবার, আহত এবং ভুক্তভোগীদের দায়িত্ব নিয়েছে ‘জুলাই গণহত্যা ফাউন্ডেশন’।”
তিনি সেনাবাহিনীর সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “বন্যা পূনর্বাসনে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। আমাদের অনুরোধে অনেকেই ঘেরাও কর্মসূচী থেকে বিরত থাকলেও, অন্যত্র কর্মসূচী দিয়ে যাতায়াতের ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। শ্রমিকদের অনেক অভিযোগ থাকলেও, শিল্পে বাধা দিয়ে দাবি পূরণ সম্ভব নয়। আমরা শ্রমিকদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আন্তরিক।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ওষুধ শিল্প ও তৈরি পোশাক শিল্প দেশের গৌরব। আমরা বিদেশি ক্রেতাদের একত্রিত করে এ শিল্পের বিকাশ ঘটাবো এবং নতুন করে শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক সবল করতে চাই। সাগর-রুনি হত্যাসহ পাঁচটি হত্যাকাণ্ডের বিচারকে অগ্রাধিকার দিয়ে গুম-খুনের তদন্তে আলাদা কমিশন গঠন করছি। মিডিয়া যেন মন খুলে সমালোচনা করতে পারে, সেই লক্ষ্যে সক্রিয় মিডিয়া কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন।”
দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে গেল ১৫ বছরে লুটপাটের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “এ থেকে উত্তরণে অকটেনের দাম ৬ টাকা এবং ডিজেলের দাম ১ টাকা কমানো হয়েছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে যাদের বয়স সাড়ে ১২ বছরের কম ছিল, তারা তালিকায় থাকবে না।”
সরকারি নিয়োগে দলের পক্ষপাতিত্বের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “২৮-৪২ বিসিএস নিয়োগে দলীয়করণ হয়েছে এবং অনেককে বঞ্চিত করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু গণভবনকে সংস্কার না করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের জাদুঘর হিসেবে রাখা হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ভিত্তিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা দলের ক্ষমতা কুক্ষিগত না করতে ৬টি সংস্কার কমিশন গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছি। এগুলো হচ্ছে— নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, পুলিশ সংস্কার, বিচার বিভাগ সংস্কার, দুর্নীতি দমন সংস্কার, জনপ্রশাসন সংস্কার, এবং সংবিধান সংস্কার। এই ৬টি কমিশন পরবর্তী ৩ মাসে তাদের কাজ সম্পন্ন করবে বলে আশা করছি। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করা হবে।”
এই ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস দেশের বিভিন্ন সমস্যা ও তাদের সমাধান নিয়ে অঙ্গীকার করেন এবং জাতিকে আশ্বস্ত করেন যে, তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের সব সংকট সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।