গবি প্রতিনিধি:
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া মারামারির ঘটনার সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনে ৯ দফা তুলে ধরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের দাবি জানান।
মানববন্ধনে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন ধরনের প্লাকার্ড নিয়ে তাদের দাবিগুলো প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেন। এসময় প্রশাসনের সামনে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ, রেকর্ড তুলে ধরে বিচার চাওয়া হয়। এছাড়াও বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে ন্যায্য ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ বিচারের দাবি করে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ৯ দফা দাবিগুলো হলো:-
১. আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বিচার করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের এখতিয়ারের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তদন্ত দ্রুততম সময়ে শেষ করতে হবে এবং তদন্ত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত চিহ্নিত হামলাকারীদের অস্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে।
২. একই সাথে যেহেতু এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ তাই আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী আইনী প্রক্রিয়া শুরু করতে চায়। এ প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল টিমকে এ ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য নিয়োজিত করতে হবে।
৩. আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের উপর এই ন্যাক্কারজনক হামলার পর তাদের চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করতে হবে। আহতদের যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
৪. আইন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয়কে নিতে হবে।
৫. মাঠে ক্রীড়া প্রশিক্ষকদের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তদন্ত প্রতিবেদন আসার আগ পর্যন্ত তাদের সাময়িক বরখাস্ত করতে হবে।
৬. পুরো ক্রীড়া কমিটি এবং প্রক্টরিয়াল কমিটিকে তাৎক্ষনিকভাবে পুনর্গঠন করতে হবে। প্রক্টরিয়াল টিমকে কার্যকর করার দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।
৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানের জন্য বর্তমান নিরাপত্তা টিমকে পুনর্গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মের অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে। এ বিষয়ক নিয়োগের সার্কুলার আজকের মধ্যেই প্রকাশ করতে হবে।
৮. আগামী ৩০ দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বেস্টনী তৈরি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে তাদের কর্মে অদক্ষতা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৯. আইন বিভাগের টিম ম্যানেজার ও অন্যান্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আনিত মিথ্যা অভিযোগ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
মানববন্ধনরত আইন বিভাগের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা মিষ্টি বলেন, ‘ফুটবল খেলায় আইন বিভাগ যে হামলার শিকার হয়েছে তার ভিডিও ফুটেজ দেখে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা গেছে। কোন শিক্ষার্থী এমন হামলা করতে পারে না। তারা মেয়েদের আঘাত করার জন্য এগিয়ে এসেছে এবং পরের দিন আমাদের আইন বিভাগে এসে উসকানিমূলক স্লোগান দিয়ে অস্থিরতা পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। মেয়ে শিক্ষাথীদের উদ্দেশ্য করে গালি দিয়েছে আমি মনে করি এগুলো ইভটিজিং এর থেকে কোন অংশে কম না। আমাদের শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের উপর চড়াও হয়েছে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে যার সব কিছু ভিডিও ফুটেজে রয়েছে। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত সুষ্ঠু নিরপেক্ষ বিচার করুক।’
আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. পারভেজ আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা দাবি নিয়ে প্রশাসনে গিয়েছে। তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একটা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির উপর আস্থা রাখছি। তারা সর্বোচ্চ তদন্ত করে বিশ্লেষণ সাপেক্ষে বিচার করবে। অপরাধীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করবে। আমি আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আহবান করবো তারা তদন্ত কমিটির উপর আস্থা রাখুক।
মানববন্ধনে শিক্ষর্থীদের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তাদেরকে ৭ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা কাজ শুরু করেছে। যারা অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তোমাদের যে দাবিগুলো ন্যায্য সেগুলো আমরা পূরণ করব।’
শিক্ষার্থীদেরকে আশ্বস্ত করে তিনি আরও বলেন, ‘ ধৈর্য ধরে শৃঙ্খলা বজায় রাখে ক্লাসে ফিরে যাও। যারা অপরাধ করছে তদন্ত সাপেক্ষে তারা শাস্তি পাবে। আমার কাছে সকল বিভাগের শিক্ষার্থীরা সমান গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টেম্বর আন্তঃবিভাগীয় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে অন্তত দুই দফায় মারামারির ঘটনা ঘটে। যার প্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে।