ডেস্ক নিউজ :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্র রাজনীতির প্রসঙ্গ এবং ডাকসুসহ সাম্প্রতিক বিষয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।শনি বার (২১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লাউঞ্জে মতবিনিময় সভাটি আয়োজিত হয়।
আলোচনায় ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ না করে সংস্কার এবং দ্রুত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে প্রশাসন সবার মতামত নিয়েছে, কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বলে জানা গেছে।
বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
দুই দফায় মতবিনিময় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে সকাল সাড়ে ১১টায় ইসলামী ছাত্রশিবির, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সভায় ছাত্রশিবিরের ঢাবি শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম, ছাত্র কাউন্সিলের ঢাবি শাখার কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সাজিদুল ইসলাম এবং সদস্যসচিব প্রজ্ঞা চৌধুরী, ছাত্র যুব আন্দোলনের আতিক চৌধুরী, আদনান আজিজ, নাইম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। জাসদ ছাত্রলীগকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাদের কোনো নেতা উপস্থিত হয়নি।
কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে আমাদের মতামত চেয়েছে। আমরা বলেছি, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা কোনো প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্ত নয়। আমরা সংস্কার চাই। আমরা গত ১৫ বছরে যে রাজনীতি দেখেছি, তা ছাত্র রাজনীতির আসল রূপ নয়। গত ১৫ বছর ছাত্রলীগের যে জুলুমতন্ত্র ছিল, নিজের মতাদর্শ অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া, তা ছাত্র রাজনীতি নয়। আমরা একটি পলিসি ডায়ালগ আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছি। যেখানে ফ্যাসিবাদের দোসররা বাদে বাকিরা আসতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাডেমিক কাজে বিশ্ববিদ্যালয়কে সহযোগিতা করতে সব ছাত্র সংগঠনকে আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রশিবিরের সভাপতি। সভায় ছাত্রশিবির ফ্যাসিবাদের সময়ে গঠিত সিন্ডিকেট ভেঙে নতুন সিন্ডিকেট গঠনের দাবি জানিয়েছে। একইসাথে পরিবেশ পরিষদ বৈষম্য তৈরি করে উল্লেখ করে তা ভেঙে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
ছাত্র কাউন্সিলের সাজিদুল ইসলাম বলেন, আমরা গণহত্যার বিচার চেয়েছি। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের পরিপন্থী। আমরা তা সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অর্ডার পুরোপুরি স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করে না। আমরা সেগুলোও বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, গণতান্ত্রিক চর্চা, সন্ত্রাসী ঘটনার বিচার চেয়েছি। আমরা বিশেষ করে প্রশাসনের দুর্বলতার কথা বলেছি।
দুপুর ২টা থেকে দ্বিতীয় অংশের আলোচনা শুরু হয়। এতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের একাংশ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী সভায় অংশ নেয়। ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক, ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ, ছাত্র ফ্রন্টের ঢাবির শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ঢাবি শাখার আহ্বায়ক নুজিয়া হাসিন রাশা, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ঢাবি শাখার সভাপতি খায়রুল আহসান মারজান অংশ নেন।
আলোচনার বিষয়ে ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কোনো এজেন্ডা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের আলোচনার জন্য ডেকেছিল। ছাত্র রাজনীতি নিয়ে সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা বলেছি, যে সিন্ডিকেট সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনে ভূমিকা রেখেছে, হল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে, সেই সিনেট ও সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে।
ছাত্র রাজনীতি সংস্কারে ছাত্রদল কিছু প্রাথমিক প্রস্তাবনা দিয়েছে জানিয়ে নাহিদুজ্জামান বলেন, আমরা দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালুর প্রস্তাব দিয়েছি। একইসাথে হলগুলোতে শুধু নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই অবস্থান করবেন। কোনরকম গেস্টরুম, গণরুম, র্যাগিং সংস্কৃতি যেন না থাকে, তার জন্য প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। ছাত্রীদের আবাসন সংকট নিরসনে দ্রুত হল নির্মাণের কথা বলেছি। এ ছাড়াও ফ্যাসিবাদের আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার তদন্তপূর্বক শাস্তি নিশ্চিত করতে একটি কমিশন গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছি।
আলোচনার বিষয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের মোজাম্মেল হক বলেন, প্রশাসনিক তত্ত্বাবধায়নে সিট বণ্টন এবং জোর করে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করতে বলেছি। অবিলম্বে পরিবেশ পরিষদের সভা আহ্বান করে ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি।