বরেন্দ্র বার্তা-২৪ ডেস্ক
জাতীয় সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার প্রস্তাব নিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন একটি খসড়া সুপারিশ তৈরি করেছে। এতে নিম্নকক্ষে ৪০০ আসন এবং উচ্চকক্ষে ১০৫ আসনে’র পরিকল্পনা করা হয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে নিম্নকক্ষে সরাসরি ভোটে নির্বাচন হবে, যেখানে ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। অন্যদিকে, উচ্চকক্ষে ১০০টি আসন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবে এবং ৫টি আসন রাষ্ট্রপতির মনোনয়নের জন্য রাখা হবে।
এই সংস্কার প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র প্রতিরোধ করা। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
দ্বিকক্ষ সংসদের প্রস্তাব ও কাঠামো স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এককক্ষবিশিষ্ট। বিদ্যমান সংসদে মোট আসন ৩৫০টি, যার মধ্যে ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। তবে নতুন প্রস্তাবে ৫০৫টি আসনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
নিম্নকক্ষে ৪০০টি আসনে নির্বাচন হবে বর্তমান পদ্ধতিতে। সেখানের ১০০ সংরক্ষিত হবে আসন নারীদের জন্য। উচ্চকক্ষে ১০৫ আসনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির মনোনীত ৫টি আসন সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে। বাকি ১০০ আসনে দলগুলো জাতীয় ভোটের অনুপাতে আসন পাবে দলগুলোকে এই আসনগুলোতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে দ্বিকক্ষ সংসদের প্রস্তাব দিয়ে আসছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময়েও অংশীজনদের অনেকে এই প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছেন।ক্ষমতার ভারসাম্য ও একনায়কতন্ত্র প্রতিরোধের পরিকল্পনা
সংবিধান সংস্কার কমিশনের মতে, ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্দিষ্ট করা, দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা পৃথক রাখা এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করার বিষয়গুলোতে জোর দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিধান সংবিধানে যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। সংবিধানের মূলনীতি ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার’-এর পাশাপাশি আরও দুটি মূলনীতি সংযোজনের কথা ভবা হচ্ছে।নির্বাচনব্যবস্থায় সংস্কারের সুপারিশ
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন একটি কার্যকর ও স্বচ্ছ নির্বাচনব্যবস্থা তৈরির জন্য প্রস্তাব তৈরি করেছে। এতে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো, ‘না’ ভোটের বিধান যুক্ত করা, প্রার্থীদের হলফনামায় বিদেশি সম্পদের বিবরণ বাধ্যতামূলক করা এবং সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রস্তাব রয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া তৈরির জন্য আইন সংশোধনের প্রস্তব দেওয়া হয়েছে।দুদকের স্বাধীনতা নিশ্চিতের পরিকল্পনা
দুদক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে দলীয় প্রভাবমুক্ত একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া চালু করা হবে। কর্মকর্তাদের জন্য ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া তৈরির কথা বলা হয়েছে।
দুদককে প্রকৃত অর্থে স্বাধীন করার লক্ষ্যে তাদের দায়িত্ব ও জবাবদিহির কাঠামোও সুস্পষ্ট করার প্রস্তাব করা হয়েছে।রাজনৈতিক সংলাপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সংবিধান সংস্কারসহ অন্যান্য কমিশনের সুপারিশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে। জানুয়ারি মাসেই এই সংলাপ শুরু হতে পারে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে মতপার্থক্য থাকলেও আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব। অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ থাকা সত্ত্বেও জাতীয় স্বার্থে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব।
চ্যালেঞ্জ ও সংশয় রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান মতপার্থক্যের কারণে এসব সংস্কার সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য হলো সব পক্ষের সমন্বয়ে একটি গ্রহণযোগ্য রূপরেখা তৈরি করা। দ্বিকক্ষ সংসদ এবং ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে সংবিধান সংস্কারের এই উদ্যোগ দেশের রাজনৈতিক কাঠামোয় একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এর সফল বাস্তবায়ন রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ওপর নির্ভর করবে