কাশ্মীরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা: পর্যটকদের ওপর গুলি, প্রাণ গেল ২০ জনের বেশি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২০ জনের বেশি পর্যটক নিহত হয়েছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ২২ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, পেহেলগাম থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বৈসারন নামক দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়।

হামলার শিকার পর্যটক দলের একজন, যিনি গুজরাট থেকে এসেছিলেন, জানান—“সব কিছু এত দ্রুত ঘটে যায় যে কিছু বোঝার আগেই চারপাশে গুলির শব্দ, চিৎকার আর আতঙ্কে সবাই ছুটে পালাতে শুরু করেন।”

কাশ্মীর পুলিশের মহাপরিদর্শক ভিডি কুমার বিরদী জানান, “এই অঞ্চলে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। হামলাটি পাহাড়ের চূড়ায় এমন এক স্থানে হয়েছে, যেখানে পৌঁছানোও কঠিন।”

হামলার সময় ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, “ভারতের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকারদের প্রতি উষা ও আমি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এই দেশের মানুষ ও সৌন্দর্য আমাদের হৃদয়ে দাগ কেটেছে। শোকার্ত পরিবারগুলোর পাশে আমরা আছি।”

ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দৃশ্যগুলোতে দেখা যায়—রক্তাক্ত মরদেহ মাটিতে পড়ে আছে, কান্নার রোল উঠেছে, আহতরা সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করছেন। যদিও এসব ভিডিওর সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, বহু আহত পর্যটককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার পর পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে সেনাবাহিনী। চেকপোস্টে যানবাহনে তল্লাশি চলছে, এবং হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে নতুন করে অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

কাশ্মীরে গত কয়েক দশক ধরেই ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা চলছে। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর অঞ্চলটিতে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। বর্তমানে কাশ্মীরে প্রায় ৫ লাখ ভারতীয় সেনাসদস্য মোতায়েন রয়েছে।

এই হামলার আগে সর্বশেষ বড় ধরনের হামলা হয়েছিল ২০২৪ সালের জুনে, যেখানে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের একটি বাসে বন্দুকধারীরা গুলি চালিয়ে ৯ জনকে হত্যা করে। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলায় নিহত হয় ৪৬ জন ভারতীয় সেনা।

কাশ্মীরের মতো স্পর্শকাতর অঞ্চলে এ ধরনের হামলা শুধু মানবিক ট্র্যাজেডি নয়, বরং রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত প্রশ্নও তুলে ধরছে—সাধারণ মানুষের জীবন সেখানে কতটা অনিরাপদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *