বরেন্দ্র বার্তা-২৪ ডেস্ক:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ রাখার কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়–সংলগ্ন লাউঞ্জে সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত পৌনে নয়টা পর্যন্ত সিন্ডিকেটের এ জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিন্ডিকেটের ১৭ জন সদস্যের মধ্যে ১৫ জন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া দুজন সিন্ডিকেট সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিটি অনেক আগে থেকেই আলোচিত ছিল। বিশেষ করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা যে ৯ দফা দাবি তুলেছিলেন, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। সম্প্রতি ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতি বন্ধের দাবি আরও জোরালো হয়ে ওঠে।
এরই মধ্যে, গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে চোর সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। একই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকেও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ একযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ঢাবির ফজলুল হক হলে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এরই মধ্যে ছয় শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিন্ডিকেটের এক সদস্য জানান, “বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতি এখন বিশৃঙ্খলার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্র-শিক্ষকরা নিজেদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা হারাচ্ছে এবং সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এ অবস্থায় ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে দলীয় রাজনীতি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তটি ঐতিহাসিক এবং সময়োপযোগী। কারণ দলীয় রাজনীতি ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছিল, যা শিক্ষার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের জন্য নিরাপত্তা এবং স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারে এবং ক্যাম্পাসে আর কোনো সহিংস ঘটনা না ঘটে, সেদিকে প্রশাসন নজর রাখবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতির অপব্যবহার রোধ করা জরুরি ছিল। শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ স্থান নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।