আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে চকধাদাশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিত’র্কিত কর্মকাণ্ড

রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি:

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রাজশাহীর চকধাদাশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের একটি বিতর্কিত কর্মকাণ্ড স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। প্রধান শিক্ষক শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে সেখানে একটি ছাগল বেঁধে রাখেন, যা স্থানীয়দের কাছে শহীদ মিনারের মর্যাদার প্রতি অবমাননাকর বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

শহীদ মিনার ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর একটি পবিত্র স্থান, যেখানে সাধারণত ফুল অর্পণ, নীরবতা পালন বা মোমবাতি প্রজ্বালনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। প্রধান শিক্ষকের এই কাজটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন যে, শহীদ মিনারের মতো একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থানে এমন কাজ ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে অপমান করার শামিল।

এ বিষয়ে চকধাদাশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আকরাম আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি ব্যস্ত আছি, এখন কথা বলার সময় নেই। ৫ আগস্টের পর থেকে আমার মন ভালো নেই, তাই এবার শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়নি। এছাড়া শহীদ মিনার নিচু জায়গায় অবস্থিত হওয়ায় আমরা কোনো দিন তালা খুলি না। আমি ছাগল বেঁধে রাখিনি। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি আমাদের স্কুলের পক্ষ থেকে পিকনিকে যাবো সেটার বাজার করায় আমি ব্যস্ত আছি।” এই কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ছুটিতে থাকায়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ বসাক বলেন, “শহীদ মিনারের মতো জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভের মর্যাদা রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। যদি কেউ এর পবিত্রতা নষ্ট করে, তাহলে অবশ্যই এটি নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছুটি থেকে ফিরলে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুঠিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লায়লা আখতার জাহান বলেন, “শহীদ মিনার ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর একটি পবিত্র স্থান। শহীদ মিনারের মতো জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভের মর্যাদা রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। যদি কেউ এর পবিত্রতা নষ্ট করে, তাহলে অবশ্যই এটি নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। আমাদের পক্ষ থেকে তার কাছে জবাব চাওয়া হবে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কেউ শহীদ মিনারের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার দুঃসাহস না দেখায়।

ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানাতে সকলেরই সচেতন থাকা উচিত, যাতে শহীদ মিনারের মতো পবিত্র স্থানের মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকে। এই ঘটনা ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *