রাবিতে শহীদ পরিবার ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়

রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি:

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শহীদ পরিবার ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার, বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে এ আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর সালেহ্ হাসান নকীব। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মতিয়ার রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, প্রফেসর মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা শহীদদের আত্মত্যাগ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসিকতার ফসল। তাঁদের আত্মত্যাগ আমাদের জাতীয় জীবনের গর্ব। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে এবং আগামী প্রজন্মকে সেই চেতনায় অনুপ্রাণিত করতে বদ্ধপরিকর।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের স্বাধীনতা সহজে আসেনি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁদের প্রতি যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদানের মাধ্যমে আমরা প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এগিয়ে নিতে পারবো।

শহীদদের ত্যাগ আমাদের জন্য এক অমূল্য ঐতিহ্য। তাঁদের আত্মত্যাগের মূল্য সঠিকভাবে বুঝে, তাদের আদর্শে আমরা আমাদের জাতিকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারবো। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীকার হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া, যেন আগামী প্রজন্ম স্বাধীনতা, সম্মান ও মর্যাদার সাথে দেশের উন্নয়ন করতে পারে।”

এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেজিস্ট্রার ড. ইফতেখারুল আলম মাসুদ, প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান, গণসংযোগ কর্মকর্তা ড. মো. আক্তার হোসেন মজুমদারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা ড. মো. আমিরুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে বক্তারা মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তাঁরা বলেন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি জাতির চির কৃতজ্ঞতা থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাঁরা বলেন, এ দেশের স্বাধীনতা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত, তাই তাঁদের ত্যাগকে মর্যাদা দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বক্তব্য:

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল কালাম আজাদ, উপ-রেজিস্ট্রার (অব.), সাবেক সচিব, আইবিএস, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, তাঁর বক্তব্যে বলেন, “স্বাধীনতা অর্জনে আমাদের যে ত্যাগ, তা ছিল দেশের জন্য এক অমুল্য রত্ন। আজকের এই সম্মাননা আমাদের কষ্টের ফল, তবে সবচেয়ে বড় পুরস্কার হচ্ছে আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি। আমরা প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা চাই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন এই সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস জানে ও তার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।”

বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর গোলাম কিবরিয়া, সহকারী রেজিস্ট্রার (অব.), স্টুয়ার্ড শাখা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো আমাদের হৃদয়ে চিরকাল রয়ে যাবে। আমাদের দেশের স্বাধীনতা আমাদের সবার মিলিত প্রচেষ্টার ফল। আজ আমরা যে সম্মান পাচ্ছি, তা আমাদের সংগ্রামের প্রতীক।”

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, উপ-রেজিস্ট্রার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বলেন, “এই দিনটি আমাদের কাছে শুধুই একটি দিন নয়, এটি আমাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রতীক। আমাদের পেছনে যে হাজারো শহীদের রক্ত রয়েছে, তা যেন আমরা ভুলে না যাই এবং তাদের আদর্শে আমাদের জীবন গড়ে তুলি।”

বীর মুক্তিযোদ্ধা খাজা নূরুন্নবী খোন্দকার, সহকারী রেজিস্ট্রার, চিকিৎসা কেন্দ্র, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, তাঁর বক্তব্যে বলেন, “স্বাধীনতার সংগ্রাম আমাদের ছিল জীবন-মরণ প্রশ্ন। আজকের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। আমাদের ত্যাগ ও কষ্টের মূল্য আজকের প্রজন্ম যেন অর্পিত দায়িত্ব নিয়ে গ্রহণ করতে পারে, এটাই আমাদের আশা।”

অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবার ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। শেষে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *