প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখলেন সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ, পুলিশ বলছে ককটেল

বরেন্দ্র বার্তা২৪ ডেস্ক:

চট্টগ্রাম নগরের ব্যস্ততম চেরাগী পাহাড়ের কদম মোবারক এলাকা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের মুক্তি, কারফিউ প্রত্যাহারসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে গতকাল সোমবার বিকেলে সেখানে জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এর মধ্যে আহত হন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য কোতোয়ালি থানার এসআই মোশাররফ হোসেন।

এ ঘটনায় করা মামলার এজাহারে পুলিশ বলছে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত মিশে গেছে। তারাই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এতে আহত হন পুলিশ সদস্যরা। কিন্তু ঘটনার ভিডিও চিত্র, প্রত্যক্ষদর্শী ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে পুলিশের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণের পর আহত হন তিনি।

গতকাল কর্মসূচি অনুযায়ী বিক্ষোভকারীরা চেরাগীর মোড়ের এক পাশে সড়কের ওপর বসে স্লোগান দিতে থাকেন। এভাবে ১৫ মিনিট বসে থাকার পর পুলিশ দুটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের পর বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর পুলিশ লাঠিপেটা করে সবাইকে সরিয়ে দেয়।

ঘটনার দিন সোমবার রাতে কোতোয়ালি থানার এসআই নয়ন বড়ুয়া বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন। এর মধ্যে এক কিশোরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে থাকা বিএনপি জামায়াতের নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। ওই সময় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এসআই মোশাররফ হোসাইন গুরুতর জখম হন। আহত হন এসআই মেহেদী হাসান, কনস্টেবল আবু রায়হানসহ কয়েক পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে মোশাররফ ঢাকার চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

আহত কোতোয়ালি থানার পুলিশ কনস্টেবল আবু রায়হানের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কয়েকজন সামনের দিকে ছিলাম। ধোঁয়া দেখি, সামান্য আহত হই। পেছনে পুলিশ সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীরা ছিলেন।’ কী ছুড়ে মারা হয়েছিল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাউন্ড গ্রেনেড নাকি ককটেল বুঝতে পারিনি।  কে মেরেছে, তা–ও জানি না।’

মামলার জব্দ তালিকায় সাক্ষী রাখা হয় প্রত্যক্ষদর্শী দুজন স্থানীয় ব্যক্তি ও এক পুলিশ সদস্যকে। তাঁদের একজন কদম মোবারক এলাকার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে আজ মঙ্গলবার বলেন, ‘সোমবার রাত ১১টার দিকে পুলিশ এসে নাম-ঠিকানা চেয়েছে। তাঁদের দিয়েছি। ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়ে কিছু জানি না।’ অথচ মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ওই দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জব্দ তালিকা তৈরি করা হয়। আরেকজন মো. ওসমানকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। জব্দ তালিকায় দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল, বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ, ৪টি লাঠি ও ১২টি ইটের টুকরা আলামত হিসেবে জব্দের কথা বলা হয়েছে।

আজ নগরের চেরাগী, কদম মোবারক এলাকায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা সবাই জানিয়েছেন, পুলিশ ছাড়া আর কারও কিছু ছুড়ে মারার সুযোগ ছিল না। একটির পর একটি সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে মারতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা আহত হন। ককটেল হলে আশপাশে থাকা গণমাধ্যমকর্মী ও পুলিশ সদস্যরা আহত বেশি হতেন।

জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম ওবায়দুল হক আজ প্রথম আলোকে বলেন, ককটেল বিস্ফোরণেই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, সাউন্ড গ্রেনেড নয়।

সোমবার কদম মোবারক এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীদের একজন ঈশা দে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনকারীদের কারও কাছে ককটেল ছিল না। পুলিশের নিজের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেডে পুলিশ সদস্য আহত হন। শতাধিকের বেশি প্রত্যক্ষদর্শী বিষয়টি দেখেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *