রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস)-এর সাবেক পরিচালক ড. স্বরোচিষ সরকারের বিরুদ্ধে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। বাংলা একাডেমি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘বাংলা ভাষার বিবর্তনমূলক অভিধান’ প্রণয়ন ও প্রকাশনার দুই বছরের অস্থায়ী কাজে সহযোগী সম্পাদক ( পরামর্শক) পদে তাঁর নিয়োগ নিয়ে এসব অভিযোগ উঠেছে।
বাংলা একাডেমির সংশোধিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ৩০ মে ২০১১ তারিখের মধ্যে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার কথা এবং যোগ্য প্রার্থীদের ১০ জুলাই ২০১১ তারিখের মধ্যে যোগদান করতে বলা হয়েছিল। তবে ড. স্বরোচিষ সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও যোগদান নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ৫ ডিসেম্বর ২০১১ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬৭তম সিন্ডিকেট সভায় ড. স্বরোচিষ সরকারের বাংলা একাডেমির কাজে যোগদানের অনুমতি নিয়ে আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলা একাডেমির বাংলা ভাষার বিবর্তনমূলক অবিধান প্রনয়ন ও প্রকাশনার সহযোগী সম্পাদক(পরামর্শক) হিসেবে কাজে অংশগ্রহণ করতে হলে তাঁকে অর্জিত ছুটি নিতে হবে।
ড. স্বরোচিষ সরকার এবং আইবিএসের তৎকালীন পরিচালক ড. মো. মাহবুবর রহমান যৌথভাবে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বরাবর এক চিঠিতে যোগদানে বিলম্বের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তাঁদের নিয়োগ কার্যকর বিবেচনার অনুরোধ জানান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএসের বর্তমান পরিচালক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, “ড. স্বরোচিষ সরকার ১ জানুয়ারি ২০১০ সালে আইবিএসের দুই বছরের জন্য হোস্টেল ওয়ার্ডেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এই অবস্থায় নিয়ম লঙ্ঘন করে তিনি বাংলা একাডেমিতে সহযোগী সম্পাদক(পরামর্শক) পদে যোগদান করেন। একইসঙ্গে তিন জায়গা থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”
তিনি আরও বলেন, “ড. স্বরোচিষ সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ধামাচাপা দেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে নিয়মিত হুমকি দেওয়া হতো, ফলে কেউ মুখ খোলার সাহস করতেন না। আমি যখন তাঁর নিয়মবহির্ভূত নিয়োগের বিষয়ে আপত্তি প্রকাশ করি, তখন তিনিও আমাকে হুমকি-ধামকি দেন।”
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, “আমি মাত্র চার মাস আগে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। ড. স্বরোচিষ সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে পূর্বের বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো অভিযোগ পেলে বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখব।”
ড. স্বরোচিষ সরকারের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, তিনি আইবিএসের পিএইচডি প্রক্রিয়ায় অনিয়ম করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন মুনকে নিয়ম ভেঙে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করে দেন।
ড. স্বরোচিষ সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ এবং বিভিন্ন মহল থেকে ড. স্বরোচিষ সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও ন্যায্যতা বজায় রাখতে তাঁকে দ্রুত জবাবদিহিতার আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।